ডন প্রতিবেদন : বিশ্বজুড়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাড়বাড়ন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি যেনো অর্থের নতুন এক দুনিয়া খুলে দিয়েছিলো মানুষের সামনে, কিন্তু তার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি সাধারণ মানুষের তুমুল আকর্ষণ তৈরি হয়েছিলো। এতে অর্থনীতির গতিপ্রবাহের মধ্যে ক্রিপ্টোকে ধরা সরকারের পক্ষ থেকে বেশ জটিল হয়ে পড়েছিলো। বাংলাদেশে এখনো নিষিদ্ধ এই ক্রিপ্টোকারেন্সি। ভারতে এর আংশিক ব্যবহার থাকলেও প্রশ্ন উঠেছিলো, কেন্দ্র কি একে নিষিদ্ধ করবে।
এই দোলাচলের মধ্যেই ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছিলেন, সরকার ডিজিটাল মুদ্রা আনতে চলেছে। এবার সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভারতে ডিজিটাল মুদ্রা আনার কথা ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। রিজার্ভ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত এই মুদ্রার লেনদেনের তথ্য রাখা হবে ব্লক চেইন পদ্ধতিতে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল, ডিজিটাল সম্পদ বিক্রি বা অধিগ্রহণ থেকে আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ করও বসানো হবে।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইউনিয়ন বাজেট পেশ করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। বাজেট বক্তৃতায় তিনি এই ডিজিটাল মুদ্রার ঘোষণা দেন।
প্রসঙ্গত, ব্লক চেইন পদ্ধতিতে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনের যাবতীয় তথ্য রাখা হয়, যা ইন্টারনেটে একটি নির্দিষ্ট ডেটাবেইসের মধ্যে রাখা হয়। লেনদেনেরসঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ এই ব্লক চেইনের তথ্য জানতে পারে না। মূলত এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই রিজার্ভ ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা আনতে চলেছে।
ইতোমধ্যে ভারতের শীর্ষ ব্যাংক এই মুদ্রা বাজারে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জানা গেছে, নগদ অর্থের সমতুল্য হবে এই ডিজিটাল মুদ্রা।
কী হবে এতে? : জে পি মরগ্যানের তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক ব্যবসায়িক লেনদেন হয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারের—বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংক মাশুল দিয়ে হয়েছে ১২ হাজার কোটি ডলার (মুদ্রা রূপান্তরের মাশুল ছাড়াই সিঙ্গাপুরের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ)। ২০১৯ সালে প্রবাসী শ্রমিকেরা ৫৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। এতে ব্যাংক মাশুল দিতে হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। এই সমস্যা সমাধানে ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট সিবিডিসি প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে নিয়ে আসছে ভারত। বিশ্লেষকেরা বলেন, ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলন হলে বৈদেশিক লেনদেন সহজ হবে। প্রবাসী আয় লেনদেন করা ই-মেইল আদান-প্রদানের মতো হবে। এতে মধ্যবর্তী খরচের ৮০ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সিবিডিসি প্রযুক্তির ভিত্তিতে ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে এসেছে।