পশ্চিম বাংলায় আবারও অপরাজেয় দিদি
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : লোকসভা নির্বাচনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বড় জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। হার হয়েছে বিরোধী দলগুলোর অনেক বড় নেতারও। রাজ্যটির ৪২টি লোকসভা আসনের ২৯টিতে জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। এতে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান দল হিসেবেই থাকছে তাঁরা। বিজেপি জিতেছে ১২টি আসনে। একটি আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। সিপিএম কোনও আসন পায় নি। বিভিন্ন বুথফেরত জরিপে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, তৃণমূল ২০টির কম আসন পাবে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ জরিপকে ‘ভুয়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং অধিক সংখ্যক আসন পাবেন বলে জানান।
বিজয়ী তারকা প্রার্থীদের মধ্যে তৃণমূল নেতা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি ডায়মন্ড হারবার থেকে, মহুয়া মৈত্র কৃষ্ণনগর থেকে, ইউসুফ পাঠান বহরমপুর থেকে, সায়নী ঘোষ যাদবপুর থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। বলিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী পরাজিত হয়েছেন। তিনি ইউসুফ পাঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়েন। হেরে গেছেন বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপিত দিলীপ ঘোষও। বর্ধমানের দুর্গাপুর থেকে তিনি নির্বাচনে লড়েছিলেন। হেরেছেন বিজেপি প্রার্থী লকেট চ্যাটার্জি। তৃণমূল নেতা অভিনেতা দেব (দীপক অধিকারী) তাঁর নির্বাচনি আসন ঘাটাল থেকে সহজ জয় পেয়েছেন। এটা তাঁর সংসদ সদস্য হওয়ার হ্যাটট্রিক। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে তিনি পরপর দুইবার নির্বাচিত হন। জয় পেয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।
ভোটের ফল প্রকাশের আগে যখন বুথফেরত জরিপে তৃণমূলের কম আসন পাওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছিলো, তখন নেতাকর্মীকে শক্ত থাকতে বলেছিলেন তৃণমূল নেতা অভিষেক। তিনি দলের প্রার্থী ও জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন। এ বৈঠকে তিনি দৃঢ় থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, তৃণমূল কমবেশি ৩০টি আসনে জিতবে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের এ জয় অভিষেকের উজ্জ্বল রাজনৈতিক ভবিষ্যতেরও ইঙ্গিত বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এ ফলাফল তাঁকে সামগ্রিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনে ভোট হয়েছে সাত দফায়। প্রত্যেক দফায় বিজেপি নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্যও দিয়েছেন। কিন্তু এসবের পরও শেষ রক্ষা হলো না।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সাংগঠনিক কাজে জোরালোভাবে অংশ নিতে শুরু করেন তৃণমূল নেতা অভিষেক। প্রার্থী ঠিক করা, প্রচারের নকশা আঁকা, পুরো পশ্চিমবঙ্গ ছুটে বেড়ানো— সবই করেছেন তিনি। অনেকের বক্তব্য, বিজেপির হয়ে অনেকটা একই রকম ভূমিকা নেন শুভেন্দু অধিকারী। যে কারণে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে দু’জনের তুলনা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। দু’জনের জন্য এ ভোট ছিলো পরীক্ষা। এতে অভিষেক পাস করলেও শুভেন্দু উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। এ অবস্থায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে শুভেন্দুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। আর বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তো এখন সবহারা। আগেই দলের রাজ্য সভাপতির পদ হারিয়েছিলেন। এবার সংসদ সদস্য পদও হারালেন।
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে এনডিএ জোটকে পেছনে ফেলেছে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট। সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির ৮০টি আসনের মধ্যে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ৪৩টি; ক্ষমতাসীন এনডিএ পেয়েছে ৩৬ আসন। অন্য একটি দলের প্রার্থী একটি আসন পেয়েছেন। রাজ্যটিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে হাতে হাত মিলেয়ে লড়াই করেছেন। তাঁদের নির্বাচনি জনসভায় উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। রাজ্যটিতে ইন্ডিয়া জোটের এমন বিজয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবার কোনও আসনই পায় নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেখানে মায়াবতীর প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে।
নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকে সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ও তাঁর স্ত্রী ডিম্পল যাদব জয়ী হয়েছেন। বারাণসী থেকে জয়ী হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রায়বেরেলি থেকে জয়ী হয়েছেন রাহুল গান্ধী। আমেথিতে সাবেক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন কংগ্রেসের কিশোরী লাল শর্মা।