ডন প্রতিবেদন : ঢাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান হত্যার মূল শুটারকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
আজ রবিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে ঢাকায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিবির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।
ডিবির ভাষ্য, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদুলকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাসুম।
এ ছাড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই হত্যায় মাসুমের অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডিবির ভাষ্যমতে, গ্রেপ্তার শুটারের নাম মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ। আজ সকালে বগুড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি গুলিতে রিকশারোহী কলেজছাত্রী সামিয়া নিহত হন।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, এই হত্যার জন্য পাঁচ দিন আগে মাসুমকে ভাড়া করা হয়। ঘটনার তিন দিন আগে কমলাপুরের ইনল্যান্ড ডিপো এলাকায় অপরিচিত এক ব্যক্তি এসে মাসুম ও তাঁর সহযোগীকে একটি মোটরসাইকেল ও অস্ত্র দিয়ে যান।
হাফিজ আক্তারের ভাষ্য, ঘটনার আগের দিনও জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে এজিবি কলোনিতে গিয়েছিলো মাসুম ও তাঁর সহযোগী। তবে সেদিন তাঁকে সুবিধামতো না পেয়ে তাঁরা ফিরে যান।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, পরদিন (২৪ মার্চ) রাতে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় জাহিদুলকে লক্ষ্য করে অনেকগুলো গুলি করা হয়। এতে জাহিদুল ও কলেজছাত্রী সামিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন জাহিদুলের গাড়িচালক মনির হোসেন।
শুধু আর্থিক সুবিধার জন্য মাসুম এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন নি বলে দাবি করেন হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, শুটার মাসুম একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর পড়াশোনা করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। তাঁর বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। তাঁর স্ত্রী-সন্তান আছে। মাসুম অপরাধজগতে জড়িয়ে একটি হত্যা মামলাসহ চার-পাঁচটি মামলার ফেরারি আসামি। এসব মামলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়াসহ নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে এই হত্যার জন্য রাজি করানো হয়। তবে কারা তাঁকে ভাড়া করেছিলেন, সেই তথ্য সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারে নি ডিবি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাহিদুল মতিঝিল এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। অনেকগুলো বিষয় এই হত্যার পেছনে রয়েছে। তবে পূর্বপরিকল্পিত এই হত্যার ‘মোটিভ’ এখনো জানা যায় নি।
ডিবি বলছে, হত্যার পরদিন রাতে ঢাকা থেকে একটি গাড়িতে করে জয়পুরহাটে যান মাসুম। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। তবে সেদিন যেতে না পেরে তিনি বগুড়ায় চলে আসেন। যে গাড়িতে তিনি জয়পুরহাটে গিয়েছিলেন, সেই গাড়ির লোকজন ঢাকায় আসার পর তাঁদের নিয়ে বগুড়ায় যায় পুলিশ। পরে বগুড়া জেলা পুলিশের সহায়তায় মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাসুমের সহযোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে ডিবি বলেছে, তদন্তের স্বার্থে তাঁর নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।
‘সামিয়াকে গুলি করা প্রসঙ্গে মাসুম জানিয়েছেন, অস্ত্রটি গুলিভর্তি ছিলো। তিনি জাহিদুলকে লক্ষ্য করে গুলি করেছেন। কিন্তু পরে শুনেছেন, তাঁর গুলিতে একটি মেয়ে মারা গেছেন।’