জুলাই হত্যাকাণ্ড : তদন্তে ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা বিশেষ করে নির্বিচারে গুলি, হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে জাতিসংঘের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছেছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) মধ্যরাতে ঢাকায় পৌঁছায় দলটি। প্রাথমিক কারিগরি এ দলের বাংলাদেশে প্রায় এক সপ্তাহের সফর করার কথা রয়েছে।
প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালেই যাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বৈঠক করার কথা রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সহকারী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করছেন। প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার দপ্তরের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রোরি মুঙ্গোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল ঢাকায় এসেছে।
তাঁরা ঢাকায় অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কাজের ধারা, প্রক্রিয়া, শর্তসহ সব বিষয় চূড়ান্ত করবেন।
জেনেভা থেকে জানা গেছে, জাতিসংঘ যখন বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তদন্ত করতে যাচ্ছে, তখন কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বিষয়টি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে- জাতিসংঘের তদন্তকে সম্মান জানিয়ে এই সময় মানবাধিকার পরিষদে আলোচনা তোলা সমীচীন নয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগ করেছে।
জাতিসংঘের দলটি, যাঁর নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোরি মুঙ্গোভেন, ঢাকায় এসে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবে। এটি নিশ্চিত নয় যে, এই দলই মূল তথ্যানুসন্ধানী দল।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এর আগে জানিয়েছিলেন, আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘকে সহায়তা করতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের চাওয়া একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। এ সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। যাঁরা এ অপরাধগুলো করেছে এবং যাঁরা হুকুম দিয়েছে; তাঁদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে এবং এ কাজে জাতিসংঘ সহায়তা করুক, এটা নিয়ে আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস জানিয়েছেন, জাতিসংঘের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল এসে প্রাথমিক তদন্তের কাজ করবে। তাঁদের ম্যান্ডেট (রাজনীতি) কী হবে, কীভাবে তাঁরা সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। প্রতিনিধিদল প্রাথমিক তদন্তের কাজের পাশাপাশি তাঁদের টার্মস অব রেফারেন্স (কাজের পরিধি), কাজের সময় সীমাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৬৩০ জনেরও বেশি ছাত্র-জনতা মারা গেছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এসব লোক নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করবে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি।