জীবিকার তাগিদে বাওর ফিরে চান হালদার সম্প্রদায়ের মানুষ : ইউএনও বলছেন, তাঁর কিছুই করার নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলার কাগজ; রাম জোয়ার্দার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) : জীবিকার জন্য বাওর ফিরে পেতে এর তীরেই মানববন্ধন করেছেন কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া হালদার পাড়ার বাসিন্দারা। গেলো সোমবার (৮ মে) সকালে এ মানববন্ধন করেন তাঁরা। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলছেন, এ ব্যাপারে তাঁর কিছুই করার নেই।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মৎস্য অধিদপ্তর ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বাওর মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চাষ শুরু করা হয়েছে। গেলো ১৩ এপ্রিল সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় মৎস্য অধিদপ্তর ওই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করে। এদিকে মেয়াদপূর্তির আগেই বাওর ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। যা ইতোমধ্যে সম্পন্নও হয়েছে।
অন্যদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপমা রায়ের নির্দেশে ১৪ এপ্রিল বাওরের তীরে নিশানা দিয়ে তা দখলে নেন স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা। বাওর পাড়ে মাইকিংও করেন তাঁরা। এতে গেলো ১ মাস বাওর পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। কোনও উপায়ান্তর না পেয়ে জয়দিয়া বাওর পাড়ের ৪ শতাধিক হালদার সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ মানববন্ধন করেছেন। বাওরের তীরেই তাঁদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে জয়দিয়া সুফলভোগী সমিতির সভাপতি নিত্য হালদার বলেন, বাওর পাড়ে ৪ শ ঘর-বসতিতে আছি আমরা। বাপ-দাদার আমল থেকে এ বাওরের কাজ করে জীবিকা চলে। বর্তমানে একটি প্রভাবশালী মহল আমাদের ভিতরে কয়েক জনকে হাত করে, আমাদের সমিতির লাইসেন্স দিয়ে বাওর ইজারা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই বাওর এখন আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ছি। বাওর চলে গেলে বেঁচে থাকার মতো কোনও উপায় নাই আমাদের। এ কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আবেদন- বাওরের ইজারা বাতিল করে আমাদের বাওর আমাদেরকে ফিরিয়ে দিন।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জয়দিয়া বাওর পাড়ের জগো হালদার, প্রসান হালদার, সন্তোষ হালদার, কার্তিক হালদার, শ্রীদাম হালদার, মাধব হালদার, পদ্ম হালদার, শংকরি হালদার প্রমুখ।
তাঁরা বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে এ বাওরে কাজ করে আসছি। এখন বাওর ইজারা দেওয়ায় তা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বাওর চলে গেলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো।
তাঁরা দ্রুত বাওরের ইজারা বাতিলের দাবি জানান।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এও জানান, তাঁদের দাবি না মানলে সামনের দিনে হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা অন্যান্য কর্মসূচিও পালন করবে।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উছেন মে বাঙলার কাগজকে বলেন, ‘মানববন্ধনের বিষয়টি আমার জানা নাই। আর বিষয়টি দেখছেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। আমরা স্থানীয়ভাবে বাওরটি শুধু দেখাশোনা করছি।’
তিনি আরও বলেন, বাওরতো ইজারা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। তাঁরা তো ওই সময় ইজারায় অংশগ্রহণ করে নি। এখন তাঁরা মানববন্ধন করছেন, তা তাঁরা করতে পারেন। তবে এটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নাই।