জাতীয় কবি কাজী নজরুলের জন্মদিন
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : বাংলা সাহিত্যের আকাশে ধ্রুবতারা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী আজ ২৫ মে। তাঁর কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পে বাঙালি জেনেছে বীরত্বের ভাষা, দ্রোহের মন্ত্র। বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছেন চিরবিদ্রোহী এ কবি।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও বেশিরভাগেই সুরারোপ করেছেন- যেগুলো নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত।
তাঁর ডাকনাম দুখু মিয়া। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে পিতৃহারা হন। এক সময় গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি সঙ্গীত রচনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন।
১৯২১ সালের অক্টোবরে তিনি শান্তিনিকেতনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৯২১ সালের মাঝামাঝি কুমিল্লার প্রমীলা দেবীর সঙ্গে প্রণয় থেকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সাড়া ফেলেন। একই বছর ২৩ নভেম্বর তাঁর যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় ও একইদিনে তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে নেওয়া হয় কলকাতায়।
১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে জবানবন্দি দেন। তাঁর এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে।
কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। ফলে আমৃত্যু তাঁকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলাদেশে আনা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা : এবারও বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকালে ঢাকায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচি। এরপর দিনভর চলবে আলোচনা, স্মৃতিচারণ ও উৎসব অনুষ্ঠান।
ছায়ানটের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী নজরুল উৎসব উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল। কথন, গান, পাঠ, আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলা একাডেমি। আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। এতে প্রধান আলোচক থাকবেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান। প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে নজরুল মেলা। উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, নজরুল বিশেষজ্ঞ ও নজরুল সঙ্গীত শিল্পী এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালকেরা। মেলায় থাকবে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল।