শিক্ষামন্ত্রীরসঙ্গে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বৈঠকে সমাধান আসে নি। অনশন চলবে।

শিক্ষামন্ত্রীরসঙ্গে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বৈঠকে সমাধান আসে নি। অনশন চলবে।
ডন প্রতিবেদক, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শনিবার (২২ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে সোয়া এক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। তবে এ বৈঠকে চলমান সংকট নিয়ে কোনো সমাধান আসেনি। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাঁদের আন্দোলন ও অনশন চলবে। ভার্চুয়াল এ বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনকারীদের দাবির কথা লিখিতভাবে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। দাবি পাওয়ার পর তিনি এ নিয়ে পরবর্তী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। একইসঙ্গে মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। রোববার পুনরায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটির বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই তাঁরা উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করবেন বলে আশাবাদ জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটি মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁরা অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ করে রবিবার সকালে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীকে অবহিত করবেন। একই সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শাবিপ্রবিতে আসেন। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তাঁরসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে দুজন অনশনকারী শিক্ষার্থীও ছিলেন। রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ১২৯ নম্বর কক্ষে আলোচনা শুরু হয়। এতে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সভা শেষে রাত সোয়া দুইটার দিকে শফিউল আলম চৌধুরী আইআইসিটি ভবনের প্রবেশমুখে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। শিক্ষামন্ত্রী সব ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। সবকিছু শুনে তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের আইনগত ও অ্যাকাডেমিক কোনো সমস্যায় যেন পড়তে না হয়, সেটি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন। শফিউল আলম চৌধুরী আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রী লিখিতভাবে শিক্ষার্থীদের সব জানাতে বলেছেন। এরপর তিনি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলটি অন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন। এদিকে বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দেন। রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের মোহাইমিনুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে তাঁরা নিজেদের দাবির বিষয়ে অবহিত করেছেন। রবিবার বেলা দুইটার পর পুনরায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আলোচনার পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে। আমরণ অনশন চলমান রেখেই তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গত ১০ দিন ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত বুধবার উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৬ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।