বাসস : কোনও বিচারপ্রার্থী যাতে হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে বিচারক, আইনজীবি ও এ পেশার সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী মানুষ আপনাদের কাছে আসে তাঁদের সমস্যার সমাধানে ও ন্যায়বিচার পেতে সহায়তার জন্য। তাই তাঁরা যাতে কোনোভাবে কোনও ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে কিশোরগঞ্জ জেলার নবনির্মিত ১২ তলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন এবং জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণ কাজের ভার্চুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির পক্ষে নবনির্মিত এ ভবনের উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সায়েদুর রহমান খান।
এ সময় কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন নির্মাণ কাজেরও শুভ সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
রাষ্ট্রপ্রধান সংযুক্ত করেন, ‘মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশে শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠা সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।
রাষ্ট্রপতি হামিদ আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিচারকাজে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইঅংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে অত্যাধুনিক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সঙ্কট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোসহ বিচার বিভাগের উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গরীব ও অসহায় লোকজন আইনি সহায়তা পাচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি এখন দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। করোনা মহামারীকালে দেশের মানুষ যেনো ন্যূনতম বিচারিক সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে দেশের সকল আদালতে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুবিধার্থে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করে সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ নির্যাতিত মা বোনকে, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধারসঙ্গে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার, কিশোরগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সায়েদুর রহমান খান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহ আজিজুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন বক্তব্য দেন।
বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।