বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পেলো ইউএমপিএল
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : দীর্ঘমেয়াদি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ৪৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড (ইউএমপিএল)। গত ১৩ ডিসেম্বর এই ঋণ নিশ্চিত হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর বহুপক্ষীয় ঋণপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের প্রথম কিস্তির ৩৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে।
ইউএমপিএল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা সম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
ইউএমপিএল হলো স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড (এসএফএল), ইউনিক হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি (ইউএইচআরএল) ও নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বি.ভির (নেব্রাস পাওয়ার) একটি কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের নির্মাণকাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৬১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ৭৫:২৫ ঋণ ইকুইটি অনুপাতে অর্থায়ন হচ্ছে। এই ইকুইটির ২৪ শতাংশ নেব্রাস পাওয়ার হতে বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে এসেছে। ঋণের অংশের অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে বহুপক্ষীয় আর্থিক প্যাকেজের মাধ্যমে, যার মধ্যে রয়েছে সুইস এক্সপোর্ট রিস্ক ইনস্যুরেন্স (সার্ভ) কাভারড স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জার্মান ডেভলপম্যান্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপম্যান্ট (ওফিড)।
প্রথম ধাপে ছাড়কৃত ৩৬০ মিলিয়ন ডলার অর্থের মধ্যে সার্ভ ইসিএ-কাভারড ঋণদাতা হিসেবে এসসিবি ২৪০ দশমিক ২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ডিএফআই ঋণদাতা হিসেবে এআইআইবি, ডিইজি ও ওফিড ১১৯ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড় করেছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের মধ্যে এটিই বৃহত্তম আইপিপি প্রকল্প ও বেসরকারি অবকাঠামো প্রকল্প অর্থায়ন। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ, করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারজনিত কারণে বৈশ্বিক বাজারে আর্থিক অস্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে এ অর্জন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘এই অর্থায়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলো (ডিএফআই) ও ব্যাংকগুলোর আস্থারই প্রতিফলন। ৪৬৩ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে একই ধরনের বিদেশি ঋণদাতাদের জন্য বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলো।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কার্যকর গ্যাস টার্বাইন, তথা জিই ৯এইচএর মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ইউএমপিএল। সাইট কন্ডিশনে এর কার্যকারিতা ৬২ শতাংশের বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস সঙ্কটের সময়ে এ প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গ্যাসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এ অর্থায়ন প্রকল্পটিকে বিশ্বমানের অবকাঠামো প্রকল্প হিসেবে গড়ে তুলবে, যার মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব, নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাবেন বাংলাদেশের জনগণ।’
ইউএমপিএলের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘৪৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ ও প্রথম পর্যায়ের বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের ঘোষণা দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মধ্যে ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ অর্জন খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কঠিন এ পরিস্থিতিতে ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজ অর্জনে সহায়তার জন্য ঋণদাতা সংস্থাসমূহ, স্পন্সর প্রতিষ্ঠানসমূহ, রেগুলেটর, ম্যানেজমেন্ট টিম ও সকল পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’