নৌপথে ভারতে গেলেই মিলবে অন-অ্যারাইভাল ভিসা
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হওয়া উচিত- দীর্ঘদিন ধরে এমন দাবি জানিয়ে আসছেন বাংলাদেশের মানুষ। বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য যাঁরা ভারতে যান, তাঁদের পক্ষ থেকেও এ দাবি বেশ জোরালো। আর নৌ-বাণিজ্যের স্বার্থেও এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকেও ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে অনেকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগও। অবশেষে এমন পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। দুই দেশের মানুষের যাতায়াত ও নৌ-বাণিজ্য সহজ করতে চালু হচ্ছে অন অ্যারাইভাল ভিসা। তবে আপাতত নৌপথে মিলবে এই সুবিধা। আশা করা হচ্ছে- চলতি বছরের মধ্যে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীরা এ সুবিধা পাবেন।
অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধার মধ্য দিয়ে নৌপথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগে তৈরি হবে নতুন সেতুবন্ধন। দুই দেশের অমীমাংসিত দূরত্ব কমিয়ে আনবে এই ভিসা। এর সুবিধা পাবেন দুই দেশের যাত্রীরা। বিদেশে পৌঁছানোর পরই ভিসা হাতে পাবেন। এক্ষেত্রে যাত্রার আগে ভিসা করতে হবে না, যা ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। ভ্রমণ হবে আরও দ্রুত ও সুবিধাজনক। যদিও সব দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় না। এ পর্যন্ত নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ সুযোগ পেয়ে থাকেন বাংলাদেশের নাগরিকেরা।
অনেক বাংলাদেশি পর্যটক ভারত ভ্রমণ এবং নদী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররাও ঢাকা থেকে কলকাতা নিয়মিত জাহাজ পরিচালনা করতে চায়। অন অ্যারাইভাল ভিসা পেলে দুই দেশের মধ্যে নৌপথে যাত্রী ও পর্যটক বাড়বে। তাই নৌপথে ভ্রমণকারীর জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করে এই ভিসা চালুতে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে।
যদিও পর্যটন কিংবা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মানুষ ভারতে বেশি ভ্রমণ করলেও অন অ্যারাইভাল ভিসা চালুর বিষয়ে আগ্রহী ছিলো না দেশটি। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের নৌ-সচিব পর্যায়ে বৈঠকে আলোচনার পর দুই দেশ এ ভিসার ব্যাপারে একমত হয়েছে। নৌপথে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করতে ভারত সরকার সম্মতিও দিয়েছে। বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের লাভ-ক্ষতি যাচাই করে শিগগির প্রস্তাবটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। আর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সংশোধিত ভ্রমণ ব্যবস্থা (আরটিএ) সংশোধনের কাজও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন ভারতের সঙ্গে কনস্যুলার মিটিং এবং আরটিএ সংশোধন করার মাধ্যমে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে, যা চলতি বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত রূপ পাবে।
অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু হলে বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াতের সুন্দর সূচনা হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু বাংলাদেশ নয়, দুই দেশের নাগরিকেরাই এর সুফল পাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, দুই দেশের মধ্যে নৌবাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য একাধিক প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নৌপথে যাতায়াতের জন্য নাবিক, ক্রু ও পর্যটকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসার বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। এ বিষয়ে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রস্তাব পাঠানো হবে। আর দুই দেশের নৌ-প্রটোকল রুট সচল রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌপথে পর্যটক বৃদ্ধির জন্য নতুন রুট প্রস্তাবও করা হয়। এই বৈঠকে দুই নৌপথের যোগাযোগ বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এরই ফলে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রক্রিয়ার বাইরে পর্যটন ইস্যুতেও বিভিন্ন প্রস্তাব করা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে এ বছরের মধ্যে নৌপথে চলাচল করা যাত্রীরা এর সুফল পেতে পারেন। এতে দুই দেশের মানুষের যাতায়াতের সুন্দরতর সূচনা হবে।