আন্দোলনের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেন ৬ সমন্বয়ক
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঙলার কাগজ : সরকার মূল দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলনের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক।
রবিবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আলোচনা শেষে এক ভিডিওবার্তায় এই ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ সহিংসতায় আহত-নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় আন্দোলনের আরও পাঁচ সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন।
আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
'আমরা এ সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।', বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, আমাদের প্রধান দাবি ছিলো কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্ম টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো। এক পর্যাযয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ দেন। এক পর্যায়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কর্মসূচিতে চলাকালে রাজধানীসহ সারাদেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে হল খালি করার নির্দেশ দেয়। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে সরকার।
গত ১৮ জুলাই সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুনের ঘটনা ঘটে। ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তখন অন্য গোষ্ঠী ঢুকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশানসকে সহায়তায় মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতা-সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সরকার। তবে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি বলেই দাবি করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ, পুলিশ, সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি হেফাজতে। এর পরদিন সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নেয় ডিবি। রবিবার আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় ডিবি।
এদিকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয় নি বলেই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, পুলিশ যদি মনে করে তাঁরা ঝুঁকিমুক্ত, তখনই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।